
শামসুর রাহমান: বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
শামসুর রাহমান, যিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে পরিচিত, ২৩ অক্টোবর ১৯২৯ সালে পুরনো ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কবিতা, যা বাংলা সাহিত্যের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে, আজও পাঠকদের হৃদয়ে গেঁথে আছে।
কবি হিসেবে শুরুর গল্প
শামসুর রাহমানের পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রামে। তাঁর বাবা ছিলেন মুখলেসুর রহমান চৌধুরী এবং মা আমেনা বেগম। ডাক নাম ছিল বাচ্চু, কিন্তু তাঁর কবিতার জন্য তিনি যে নামটি খ্যাতি অর্জন করেছেন, তা হলো শামসুর রাহমান।
কর্মজীবন: সাংবাদিকতা থেকে কবিতা
শামসুর রাহমান ১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ সহসম্পাদক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর রেডিও পাকিস্তানে অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে কাজ করেন। পরে আবার দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ ফিরে আসেন। সাংবাদিকতা তাঁর লেখালেখিতে এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে, যা তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।
কবিতার জগতে প্রবেশ
১৯৫৫ সালের ৮ই জুলাই তিনি জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন এবং তাঁদের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। শামসুর রাহমানের কবিতা মূলত মানবিক অনুভূতি, প্রেম, প্রকৃতি ও সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গঠিত। তাঁর কবিতাগুলি এমন এক সময়ে লেখা হয়েছিল, যখন বাংলা কবিতায় নতুনত্বের প্রয়োজন ছিল।
কবির প্রভাব
শামসুর রাহমান বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁর কবিতার মধ্যে গভীরতা এবং মৌলিকতা রয়েছে, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। আল মাহমুদ এবং শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর তুলনা করা হয়, কিন্তু শামসুর রাহমানের কবিতার একটি স্বতন্ত্র স্বর রয়েছে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
শামসুর রাহমানের কবিতায় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোও স্থান পেয়েছে। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর কবিতার মাধ্যমে মানুষের মুক্তির সংগ্রামের কথা বলেছেন। তাঁর কবিতাগুলি আন্দোলন, সংগ্রাম এবং মানবতার জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করে।
উপসংহার
শামসুর রাহমান ১৮ আগস্ট ২০০৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান, কিন্তু তাঁর কবিতা আজও আমাদের মাঝে জীবিত। তাঁর সাহিত্যকর্ম আমাদের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। আসুন, আমরা তাঁর কবিতার মাধ্যমে আমাদের মানবিক অনুভূতিকে আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করি। 🌟